পঙ্গপাল সমাচার

 

পঙ্গপাল

ঘাসফড়িং এর সমগোত্রীয় একটি প্রাণী পঙ্গপাল। দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ে আমরা পঙ্গপাল সম্পর্কে খুব বেশি জানতে পারিনি, তাই আজকে আমি চলে এলাম পঙ্গপাল সম্পর্কে তথ্য নিয়ে। 

পৃথিবীতে অন্য কোন প্রাণী পঙ্গপালের মতো এতো বিপুল পরিমাণে আগমন ঘটায় না। পঙ্গপাল আর ঘাসফড়িং এর মধ্যে মূল পার্থক্য হল ঘাসফড়িং একাকী বসবাস করে, আর পঙ্গপাল বসবাস করে ঝাঁকে ঝাঁকে। একক পঙ্গপালকে ইংরেজিতে বলা হয় Locust, আর এদের ঝাঁককে বলে Locust Swarm। বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক পরিবেশে দলবদ্ধ থাকা অবস্থায় ভয়ংকর পতঙ্গের রূপ ধারণ করে। পঙ্গপাল ঝাঁক বেধে আক্রমণ করে মাঠের পর মাঠ উজাড় করে ফেলতে পারে। ১০ লক্ষ পঙ্গপালের একটি ঝাঁক একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে সক্ষম। 

তাই প্রাচীনকাল থেকেই পঙ্গপাল যেন এক বিভীষিকার নাম। পবিত্র কোরআন এবং বাইবেলের মতো একাধিক ধর্মগ্রন্থে  এদের আক্রমণ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যতক্ষণ কোন এলাকায় খাদ্যশস্য আছে, এরা ততক্ষণ ওই এলাকায় থাকে। খাদ্যের অভাব দেখা দিলে এরা ঝাঁক বেধে খাবারের গন্ধ শুঁকে অন্য জায়াগায় হাজির হয়। এরা এদের গতিপথে আরো অনেক ঝাঁকের সাথে মিলিত হয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করে, এসময় একেকটি ঝাঁকে কয়েক বিলিয়ন পর্যন্ত পতঙ্গ অবস্থান করতে পারে। এই বিশাল পঙ্গপালের দল চলার পথে তাদের খাদ্য উপযোগী সকল কিছু সাবাড় করে ফেলে।

একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার নিজের ওজনের সমান খাবার খেতে পারে। আর এদের একটি ঝাঁক একদিনে হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য খেয়ে ফেলতে পারে, যার মাধ্যমে কোন অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক ধস নামতে পারে।

কারণঃ  

মাটিতে পঙ্গপালের ডিম দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে, এমনকি ২০ বছর পরেও এদের ডিম থেকে বাচ্চা হতে পারে।

২০১৯ সালের শেষে ও ২০২০ সালের শুরুতে আফ্রিকার দেশগুলোতে স্ববাভিকের তুলনায় ৪০০ গুন বেশি বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে পৃথিবীর একাধিক অঞ্চলে পঙ্গপালের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ বৃষ্টিপাত এদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

 

প্রতিরোধঃ পঙ্গপালের উপদ্রব ঠেকাতে এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর উপায় পাওয়া যায়নি।

ডিম থাকা অবস্থায় এদের নষ্ট করার কার্যকর উপায় বের করতে পারলে পরবর্তীতে কীটনাশক প্রয়োগ দ্বারা ফসল বিষাক্ত হবার ঝুঁকি থাকবেনা। 

২০১৯ সালে  সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার প্রায় ১২,০০০ এবং কেনিয়ার প্রায় ৮০,০০০ হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস করেছে পঙ্গপাল। ২০১৭ সালে নাইজেরিয়া একক ভাবে ৪০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি কীটনাশক প্রয়োগে ব্যয় করেছে। কীটনাশক ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও, এই সুবিধাগুলো মূলত স্বল্পমেয়াদী। কেননা পোকামাকড় দ্রুত তাদের প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তাই এখন পঙ্গপাল আক্রান্ত অঞ্চলে হেলিকপ্টার দিয়ে কীটনাশক ছড়িয়েও এদের দমন করা সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া কীটনাশক পরিবেশ এবং ভোক্তা কৃষকদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। ২০১৭ সালে, জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে প্রায় ২০০,০০০ মানুষ, প্রতি বছর কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা যায়।এসব ক্ষেত্রে Bio-pesticides ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি কমানো সম্ভব হলেও প্রক্রিয়াটি জনপ্রিয় নয়, কারণ এর মাধ্যমে কীটপতঙ্গ মেরে ফেলতে বেশ সময় নেয়। 

 

Post a Comment

0 Comments