Humayun Ahmed Biography in Bangla

Biography- হুমায়ূন আহমেদ  

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক তথা কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একাধারে গীতিকার, ঔপোন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, চিত্র নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা।এছাড়া তিনি তার নিজের লেখায় স্বরচিত অসংখ্য কবিতা ও পঙক্তি ব্যবহার করেছেন যা সৃষ্টির দিক থেকে অতুলনীয়। আসছে ১৩ই নভেম্বর এই কিংবদন্তি স্রস্টার জন্মদিন। চলুন জেনে আসি বাংলা সাহিত্যের এই জনপ্রিয় লেখকের জীবন গল্প।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ ই নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ, যিনি ছিলেন একজন  গৃহিণী। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি 'জীবন যেরকম' নামে একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ লিখেন এবং এর মাধ্যমে তার লেখক প্রতিভার পরিচয় ঘটে। তার পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক পুলিশ অফিসার, তিনিও  পিরোজপুর শহরে থাকাকালে 'দ্বিপ নেভা যার ঘরে' নামে একটি বই লিখেন।জন্মের পর তার পিতা হুমায়ূন আহমেদের নাম নিজের নামের সাথে মিলিয়ে 'শামসুর‍ রহমান' রাখেন, ডাক নাম রাখা হয় 'কাজল'।তার পিতা সন্তানদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন এবং পরবর্তীতে তার নাম রাখেন ' হুমায়ূন আহমেদ '। মূলত হুমায়ূন আহমেদের পরিবারে সর্বদাই সাহিত্য চর্চা ছিল। পিতার সরকারি চাকরির সূত্রে তাদের শৈশব থেকেই বহুবার আবাসস্থল পরিবর্তন করতে হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদরা ছিলেন তিন ভাই ও তিন বোন। তারা তিন ভাই-ই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। 

তিনি ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং সেসময় খেলার জন্য তার কিংবা তার বন্ধু কারোরই ফুটবল ছিল না। অথচ ফুটবল ছিল তাদের প্রিয় খেলা। তাদের একটি ফুটবল খেলার ক্লাবও ছিল। হুমায়ূন আহমেদের এক বন্ধুর মা একবার ঘোষণা দিলেন যে, তার ছেলে অর্থাৎ হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু যদি এবার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে তবে তাকে একটি ফুটবল পুরস্কারস্বরূপ কিনে দিবেন। কিন্তু বন্ধুটি লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিল না এবং সেসময় একটা ফুটবল খুবই দরকার ছিল। তাই ডানপিটে, লেখাপড়ায় অমনোযোগী হুমায়ূন আহমেদ তখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনিই তার বন্ধুকে পড়াবেন। কিন্তু কাউকে পড়ানোর জন্য তো নিজেরও কিছু পড়াশোনা করতে হয়। তাই তিনি পড়াশোনা করে প্রতিদিন বন্ধুকে পড়াতে লাগলেন।পরীক্ষার ফলাফলের দিন দেখা গেল হুমায়ূন আহমেদ শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন। তার বন্ধুর পরবর্তীতে ফুটবল পাওয়া হয় কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি, কিন্তু ততদিনে যে হুমায়ুন আহমেদের লেখাপড়ার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল তা বোঝা যায়। পরবর্তীতে তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ২য় স্থান অর্জন করে এসএসসি পাস এবং ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। এর পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে ১ম শ্রেণিতে বি.এস.সি সম্মান এবং এম.এস.সি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭১ সালে যুদ্ধের আগে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার দেশপ্রেমিক পিতাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে এবং হুমায়ূন আহমেদ ও তার ছোট ভাই জাফর ইকবালকে হত্যা করার জন্য খুঁজতে থাকেন। সে সময় তারা দুই ভাই কোনোভাবে ভাবে পালিয়ে বাঁচেন। যুদ্ধের পর তার পরিবার তাদের শহীদ পিতার কবর খুঁজে পান। ততদিনে অবশ্য তার পিতার লাশ মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। দেখে চেনার উপায় ছিল না যে সেটি কার কবর। তাই সেসময় তার মা আয়েশা ফয়েজ বিশ্বাস করতে চাইতেন না যে তার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু অবশেষে কবরের লাশের দাঁত এবং মোজা চিহ্নিত করে তারা বুঝতে পারেন যে এটি তাদের পিতার কবর। 

যুদ্ধের পরে হুমায়ূন আহমেদের পরিবার চরম আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে যায়। সেসময় তাকে তার পরিবারের হাল ধরতে হয়। সেসময় তিনি রসায়ন বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন এবং পরবর্তীতে স্কলারশিপ নিয়ে নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার কেমিস্ট্রি তে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে এবং পুনরায় দেশে ফিরে শিক্ষকতা শুরু করেন। বলা হয়ে থাকে শরৎচন্দ্রের পরে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস বাংলা সাহিত্য সমাজে সর্বাধিক পঠিত।

১৯৭৩ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনের পর বাংলাদেশে এসে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এসময় তিনি তার প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী 'তোমাদের জন্য ভালোবাসা' রচনা করেন।পরবর্তীতে তিনি আরও অনেক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেন। তার লেখনীর মাধ্যমেই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বাংলা সাহিত্য সমাজে জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে রসায়ন বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যোগ দেন। তিনি ছাত্র মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন।


১৯৭১ সালে তিনি 'নন্দিত নরকে' বইটি প্রকাশ করতে পারেননি মুক্তিযুদ্ধের  কারণে।মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে কবি সাহিত্যিক আহমেদ ছফার উদ্যোগে বইটি প্রকাশ করেন। প্রখ্যাত ভাষা বাংলা ভাষাশাস্ত্র পন্ডিত আহমেদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বইটির ভূমিকা লিখে দিলে তা সাহিত্যমহলে কৌতূহল সৃষ্টি করে। পাঠক ও লেখক সমাজ বুঝতে পারেন যে সাহিত্য সমাজে এক নতুন নক্ষত্রের আগমন ঘটতে চলেছে। তার প্রথম প্রকাশিত বই 'নন্দিত নরকে' হলেও তার প্রথম লেখা উপন্যাসটির নাম 'শঙ্খনীল কারাগার'। এ বইটি তিনি এত অনুভূতি ও আবেগ দিয়ে লিখেছিলেন যে লেখার পর পান্ডুলিপিটি পড়ার সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। পান্ডুলিপিটি  তিনি তার ছোট ভাই জাফর ইকবালকে পড়তে দিলে ছোট ভাই তার লেখক প্রতিভা বুঝতে পারেন। এরপর ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে থাকে হুমায়ূন আহমেদের অসংখ্য উপন্যাস, ছোটগল্প, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং ছোটদের জন্য গল্প।

প্রতিবছর পাঠকরা বইমেলায় তার বইয়ের জন্য প্রতীক্ষা করে থাকতেন। তার প্রত্যেকটি বই হতো বেস্ট সেলার। তার সৃষ্ট কিছু অসাধারণ। চরিত্রের নাম হিমু, মিসির আলী, শুভ্র প্রভৃতি। এসব চরিত্র পাঠকদের মনে খুব সহজেই জায়গা করে নেয়। তার লেখা অসংখ্য জনপ্রিয় কিছু বইয়ের নাম হল নন্দিত নরকে, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প,শঙ্খনীল কারাগার, সূর্যের দিন, শ্রাবণ মেঘের দিন, অপেক্ষা, আমার আছে জল, দারুচিনি দ্বীপ,মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য, হিমুর আছে জল ইত্যাদি। জীবদ্দশায় তিনি ২০০এর অধিক উপন্যাস লিখে গিয়েছেন। এছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন। তার লেখনীর বৈশিষ্ট্য ছিল গল্প সমৃদ্ধি। এছাড়া এতো সহেজ ও বাস্তব ভাবে গল্পের অবতারণা করতেন যে তা  জাদুবাস্তবতা হিসেবে কল্পনা করা হয়। চরিত্র চিত্রায়ন এর সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রতিভা ছিল তার। এছাড়া তার উপন্যাস ও লেখনীতে ফুটে উঠত সমাজ সচেতনতা ও দেশপ্রেম। তার লেখনীর জন্য তিনি পেয়েছেন প্রচুর সম্মান ও পুরষ্কার। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক সহ আরো অনেক।

To read part-02 👈

Tasmim Bintay Haque 

Post a Comment

0 Comments