ভারতের বাজার ক্রয়রীতি

প্রথম আলোয় তাদের নয়াদিল্লির প্রতিনিধি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে একটি বিষয় নিয়ে আমি করে ভাবি।  আমার ভাবনাটাকে পড়লে আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন বলে আমি মনে করি।  

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জীবনযাপনের চিত্র নিয়ে আমাদের দেশে কিছু গল্প প্রচলিত আছে যেগুলোতে মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের ব্যঙ্গ করা হয়ে থাকে। তারা যে কতটা কৃপণ তা এইসব গল্পে বলা হয়।সেসব গল্পে এখন না যাই।বরং সংক্ষেপে দুটি উদাহরণ দেই,আপনারা জেনে থাকবেন ভারতের বাজারে মাছ বা মাংস বিক্রি হয় পিস পিস করে  অর্থাৎ পুরোটা একসাথে নয়। "সত্যি কি কৃপণ ওরা!" এত কাল তো আমরা তাই ভেবেছি , তাই না? এরপর বাংলাদেশের মিষ্টির দোকানে শুনেছেন কখনো ১০০ গ্রাম মিষ্টি বিক্রি হতে ? না। কিন্তু ভারতে এই রীতি বহুল প্রচলিত । এমনকি সেখানে এক পিস করে মিষ্টি, ১ পিস করে ফল বিক্রি হয়। আপনার বাড়ির দারোয়ানের দিকে কিংবা রিক্সাওয়ালার দিকে তাকান তো। তারা কি কখনো চাওয়া মাত্র খেতে পারে ইলিশ মাছ? দারুন স্বাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য তাদেরও তো মন চাইতে পারে, তবে তারা কি এই শখগুলো চাওয়া মাত্র পূরণ করতে পারে?এগুলো কেন আমি আপনাদের লিখছি? না,  ওদের কোনো কিছু বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের এসব বলছি না । সেটা একান্তই প্রত্যেকের নিজ নিজ  ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাইলেই তো সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে পারি যাতে তারা নিজের রক্ত পানি করা উপার্জনেই নিজের পছন্দের খাদ্য কিনতে পারেন। 

Indian fruit market 

ভারতের বিক্রয় ব্যবস্থা দেখে আপাতদৃষ্টিতে কৃপণতার মতো মনে হলেও ভেবে দেখুন এতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এমনকি গৃহহীন ব্যক্তিটিও চাইলে তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারছে। শুধু ভারত নয়, এমন রীতি আছে পৃথিবীর অনেক দেশেই। আমরা কি তাই পারি না আমাদের এদিকেও পরিবর্তন আনতে? আপনি আপনার জায়গা থেকে শুরু করেন, দেখবেন একদিন আপনাকে অনুসরণ করেই ধীরে ধীরে বদলে গেছে রীতি। ব্যাপারটার গুরুত্ব আপনি অন্য ভাবেও  দেখতে পারেন। এর ফলে সর্বস্তরের মানুষের আমিষের চাহিদা অনেকটাই নিশ্চিত হবে, দেশের দরিদ্র ব্যক্তিটি, যে কিনা এখন হয়তো ছয় মাসে একদিনও একটি ভালো মাছের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পান না, শুধুমাত্র অর্থের অভাবে যারা আমিষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তারা কিছুটা হলেও কম বঞ্চিত হবেন আর খাদ্য পচে নষ্টও হবে না। 

আপনি হয়তো অনলাইনে কেক-এর দোকানের মালিক। চাইলে রাখতে পারেন আপনার খাদ্য তালিকায় বড় সাইজের দামি কেক।তবে সাথে কিছু ছোট সাইজের ভালো মানের কেকও রাখুন, যা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে পড়বে। কিংবা হয়তো আপনার মাছের ব্যবসা রয়েছে, রাখুন না শুধু মাছের পেটের পিস বা লেজের কাটা পিসও নিম্নবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণের  সুবিধার জন্য। এভাবে যদি প্রত্যেকের ক্ষেত্র থেকে চেষ্টা করা হয় তবেই পরিবর্তন আসবে। মনে রাখতে হবে আমাদের সবাইকে যে আপনি নিজে যেই ব্যবসাই করুন না কেন, আপনার থেকে সকল স্তরের মানুষ যেন সবসময় সছন্দে দ্রব্য কিনতে পারেন। তখনি আপনার ব্যবসাটি  সার্থক হবে। ব্যবসা হবে এমন যেখানে থাকবে অভিজাতদের পাশাপাশি অন্যান্য শ্রেণীর মানুষের  জন্য মানসম্পন্ন সহজলভ্য পণ্য।

Post a Comment

0 Comments